ওরগ্রাম ফরেস্টে একদিন।

রবিবার দুপুরে আমরা চার বন্ধু বেরিয়ে পড়লাম বর্ধমান জেলার ওরগ্রাম ফরেস্টের উদ্দেশে। গুগল ম্যাপে দেখে নিলাম নৈটি  থেকে ওর গ্রামের দূরত্ব 132কিলোমিটার। ডানকুনি টোলপ্লাজা পেরিয়ে আমাদের গাড়ি দুর্গাপুর এক্সপ্রেস ওয়ে ধোরে উদ্দশ্বাসে ছুটতে শুরু করলো। দুর্গাপুর এক্সপ্রেস ওয়ে ধোরে বর্ধমানের দিকে গেলে মন ভালো হয়ে যায়। রাস্তার দুই পাশে বড়ো বড়ো গাছের সারি তার পিছনেই মখমলি সবুজ ধানের জমি দিগন্ত পর্যন্ত বিস্তৃত, জায়গায় জায়গায় কাশফুলের সারি আর এর বুক চিরে চলে গেছে চকচকে কালো পিচের রাস্তা আর নীল আকাশের বুকে সাদা মেঘেদের আলপনা। জমিতে জমিতে কাশফুলের সারিতে বাতাসের হালকা দোলা আর নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মোতো সাদা মেঘেদের আলপনা মোনে করিয়ে দেয় দুর্গাপূজা আসছে। প্রকৃতিতে আজ মায়ের আগমনী বার্তা। এসব দেখতে দেখতে আমাদের গাড়ি পালসিট টোলপ্লাজাতে এসে পৌছালো। টোলপ্লাজা পেরিয়ে গাড়ি উর্দ্ধশ্বাসে দৌঁড়াতে শুরুকরলো। বেশ কিছুদূর যাবার পর দেখি রাস্তার পাশে গাছের ছাওয়ায় থরে থরে ডাবের সারি নিয়ে বোসে বিক্রেতারা। আমরাও গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়লাম। সবুজ কোচি কোচি ডাবে গলা ভিজিয়ে আবার এগিয়ে চললাম। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর এসে পৌছালাম বর্ধমান। রাস্তার পাশে অনেক রেস্তোরা, বড়ো বড়ো কোম্পানির শোরুম। পথের বাঁ দিকে পড়লো রেনেসাঁর হাউসিং কমপ্লেক্সে, আমরা গাড়ি স্লো কোরে দিলাম, এর পরেই পড়লো নবাব হাট মোড়, সেখান থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেস ওয়ে ছেড়ে ডানদিকে ঘুরে এসে পড়লাম গুসকরা রোডে।নবাব হাট থেকে ওর গ্রামের দূরত্ব 24কিলোমিটার।  গুসকরা রোড ধোরে আমরা এগিয়ে চললাম। পথের পাশে সবুজ ধানের জমি দিগন্ত পর্যন্ত বিস্তৃত, জায়গায় জায়গায় হয়ে রয়েছে প্রচুর কাশফুল, তারই মাঝে ছোট ছোট মাটির দোতলা বাড়ি মাথায় টিনের চাল। পেরিয়ে যাচ্ছি ছোট ছোট কয়েকটি গ্রামীণ বাজার তার পরেই আবার সবুজ ধানের জমি। অবশেষে আমরা এসে পৌঁছলাম শায়েরপাড় বাস্ট্যান্ড এ। এখান থেকে ডানদিকে ঘুরে পড়লো ওর গ্রাম বাজার। পথের পাশে ছোট ছোট সব  দোকান। পিছন দিকে মাটির দোতলা বাড়ি টিনের চাল, এসব দেখতে দেখতে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে রাস্তা থেকে বাঁ দিকে বেঁকে আমরা প্রবেশ করলাম ওরগ্রাম ফরেস্টে। লাল বাঁকুড়া মাটির রাস্তা চলে গেছে গভীর জঙ্গলের মধ্যে। কিছু দূর এগিয়ে পথের ডানদিকে পড়লো ফরেস্ট অফিস। আর মোড় থেকে পথের বাঁ দিকে   একটু এগিয়ে সিলভার লাইন রেস্টুরেন্ট। আমরা আরো গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করলাম। রাস্তার পাশে হয়ে রয়েছে বড়ো বড়ো উই ঢিপি। চারিদিকে শুধু ঝিঝি পোকার ডাক সোনা যাচ্ছে। আমরা আরো গভীরে প্রবেশ করলাম, দেখলাম ব্রিটিশ আমলের পরিত্যক্ত একটা এয়ার স্ট্রিপ। এদিকে দিনের সবকাজ সমাপন কোরে সূর্যদেব চললো অস্তাচলে, গভীর জঙ্গলের ফাঁক দিয়ে দূরের আকাশে তার চলে যাবার রেস টুকু রেখে দিয়ে। গভীর জঙ্গলে এখন কালো রাত নেমে এল তার সাথে আরো প্রকট হলো ঝিঝি পোকার ডাক। রাতের জঙ্গলকে চেটে পুঁটে উপভোগ কোরে আমরা চললাম জঙ্গলের এক পাশে সিলভার লাইন রেস্টুরেন্টে। জঙ্গলের মাঝে  রেস্টুরেন্ট অপূর্ব তার উপস্থিতি, এখানে চা এর সাথে হালকা খাবার খেয়ে আমরা চললাম বাড়ির পথে। 





মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শিলাবতী নদীর তীরে গণগনি।

রহস্যময় রূপকুন্ড

উইকএন্ড ট্রিপে পাল্লা রোড