pot maya festival


Pot  maya
 Naya, Pingla, west medinipur 
স্মৃতির সরণি থেকে 
শিল্পী গ্রামে একদিন। 

---------------

2019 এর নভেম্বর, বাতাসে তখন হালকা শীতের আমেজ। মন উরু উরু কেবল মনে হয় কোথাও ঘুরতে যাই । এমন সময় পল্লবের কাছ থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের শিল্পী গ্রাম "নয়া "ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ  এল। পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা ব্লকে নয়া গ্রাম অবস্থিত। নয়া হোলো বাংলার হারিয়ে যেতে বসা পট শিল্পীদের গ্রাম। পট শব্দটি সংস্কৃত থেকে এসেছে, পট মানে কাপড়ের টুকরো বা ক্যানভাস, তার ওপর আঁকা চিত্র তাই  পট চিত্র। এই চিত্র গুলি প্রাকৃতিক রং যেমন ফুল, পাতা, গাছ, ফল, ব্যাবহার কোরে রং  তৈরী কোরে  আঁকা হয়। পট শিল্পীরা রামায়ণ, মহাভারত, কোনো পৌরাণিক কাহিনী, আদিবাসী সমাজের চিত্র ও তাঁদের দেব দেবীর ছবি বা কোনো সামাজিক বার্তা এই সব কিছুই চিত্রকলার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন এবং প্রত্যেক ছবির সাথে  তাঁদের নিজেদের রচিত গান গেয়ে গেয়ে তাঁদের তৈরী চিত্রকলাগুলির প্রচার ও বিক্রি করেন।এই গ্রামে রাষ্ট্রপতি পুরুস্কার পাওয়া ও আরো অনেক পুরস্কার পাওয়া শিল্পীরা রয়েছেন। 
 এই হারিয়ে যেতে বসা শিল্পকলাকে বিশ্ব দরবারে সামনের সারিতে তুলে আনার জন্য NGO বাংলানাটক ডট কম  অনেক সাহায্য করছেন। প্রত্যেক বছর নভেম্বরে তিনদিন এই নয়া গ্রামে "পট মায়া "নাম দিয়ে এক মেলার  আয়োজন করেন। তাঁরাই এই মেলা কে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে ও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট এর মাধ্যমে প্রচার করেন। সারা বাংলা থেকে চিত্র প্রেমী লোকজন তখন নয়া গ্রামে আসেন। শুধু বাংলা থেকে নয়, এমনকি বহু বিদেশি টুরিস্টরাও এই সময় নয়া গ্রামে আসেন শিল্পকলার টানে।কলকাতা বই মেলার  স্টলে আমরা পট শিল্পীদের দেখতে পাই এদের নামের শেষে চিত্রকর যোগ করা হয়, সন্মান জানানোর জন্য। 
      16ই নভেম্বর আমরা চার বন্ধু বেরিয়ে পড়লাম পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা ব্লকের নয়া গ্রামের উদ্দেশে। গুগল ম্যাপ সঙ্গে আছে যখন পৌঁছেতে কোনো অসুবিধা হবে না। দুর্গাপুর এক্সপ্রেস ওয়ে ছেড়ে বোম্বে রোড পড়লাম। রূপনারায়ণের উপর ব্রিজ পেরিয়ে রাস্তার ধারে ধাবায় দুপুরের আহার চোব্য চোষ্য কোরে হোলো। মাংসের স্বাদ টা দারুন ছিলো। এর পর গাড়ি নন স্টপ চলবে। ডেবরা, বালিচক রেলওয়ে ক্রসিং, মুণ্ডমারির মোড়, পিংলা হোয়ে নয়া গ্রাম পৌঁছাতে বিকাল হোয়ে গেলো। গ্রামের রাস্তার ধারে অনেক গাড়ির সমাবেশ, কলকাতা থেকে অনেক লোক এসেছে শুনলাম।মেলার সামনে বিশাল তোরণ, আর পাঁচটা গ্রামীণ মেলার মোতো জিলিপি, বাদাম, পাঁপড়, গজা ও আরো অনেক সামগ্রীর দোকান। মেদিনিপুরী তেলে ভাজার দোকানও  রয়েছে। আমরা পরে স্বাদ নেবো। আমরা গ্রামের ঢালাই রাস্তা ধোরে এগিয়ে চললাম। গ্রামের বাড়িগুলির দেওয়াল,  দরজা সুন্দর সুন্দর ছবি দিয়ে সাজানো। এখানে প্রায় 135টি চিত্রকর পরিবারের বাস। প্রত্যেক বাড়ির সামনে ছোট ছোট ষ্টল তাঁদের চিত্রকলা সামগ্রীর। পট চিত্র তো রয়েছেই এ ছাড়াও শাড়ি, ছাতা, কেটলি, পাখা আরো কত কি সামগ্রীর তাঁরা শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তুলেছেন। এগুলি বেশ দর দাম কোরে কেনা যায়।গ্রামের যত ভিতরে প্রবেশ করছি ষ্টল এর সংখ্যা বেড়ে যেতে থাকলো। গ্রামের মাঝে বাংলানাটক ডট কমের স্টেজ সেখানে বিভিন্ন সংস্ক্রতিক অনুষ্ঠান চলছে। সেখানে ভিড়ের মধ্যে বিদেশি  পর্যটকরাও রয়েছে। পট শিল্পীরা তাঁদের স্টলে বোসে বোসে ক্যানভাসে ছবি আঁকছে, কেউবা ছবি মেলে ধোরে গান গেয়ে ছবির মাহাত্য বোজাচ্ছে। শিল্পীদের গ্রামে এসেছি আর তাঁদের জীবন কাহানি শুনবনা তা কখনো হয়? তাঁদের সাথে অনেক গল্প করলাম। শুনলাম এই পট চিত্রের সাথে যারা যুক্ত অৰ্থাৎ চিত্রকরেরা সকলেই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ।কয়েক পুরুষ ধোরে তাঁরা এই শিল্প কর্মের সাথে যুক্ত। এই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরা রামায়ণ, মহাভারত, হিন্দু দেবদেবীদের গল্প গানের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলে আমাদের সামনে পরিবেশন করছেন। বেশ কয়েক পুরুষ ধোরে তাঁদের এটাই জীবিকা। ইউনিটি ইন ডাইভারসিটির এর থেকে ভালো উদাহরণ আর কি বা হতে পারে? রাত অনেক হোলো, আমরা বেশ কয়েকটা পট চিত্র নিয়ে চললাম বাড়ির পথে।
কি ভাবে যাবেন :-যারা ট্রেনে যাবেন,  হাওড়া থেকে বালিচক স্টেশন। সেখান থেকে প্রাইভেট গাড়িতে, বাসে বা ট্রেকারে চল্লিশ মিনিটের পথ। 
কোথায় থাকবেন :-নয়া গ্রামে টেন্টে অথবা শিল্পীদের বাড়িতে থাকা যায়। এ ছাড়া পিংলা বাজারে দেখেছি কয়েকটা হোটেলে আছে সেখানে থাকা যেতেই পারে। 
     

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শিলাবতী নদীর তীরে গণগনি।

রহস্যময় রূপকুন্ড

উইকএন্ড ট্রিপে পাল্লা রোড